গোমতির পাড়ে ফুটবল উন্মাদনায়...

1688404964924-01.jpeg

ভরা বর্ষা মৌসুমে একসময় গ্রাম-গঞ্জ কিংবা শহর নগরের মাঠগুলোতে ফুটবলের উন্মাদনা দেখা যেত। এলাকা কিংবা ক্লাব ভিত্তিক বিভিন্ন লোকাল টুর্নামেন্টগুলো ছিল সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ছোটবেলায় এ ধরনের টুর্নামেন্ট বহু দেখেছি। এমনকি কিছু কিছু টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করার সুযোগও হয়েছিল। হাই স্কুলে পড়াকালীন সময় একবার আমাদের স্কুলের হয়ে একটা স্কুল ভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করেছিলাম। এছাড়া বান্দরবান থাকাকালীন সময় আমাদের পাড়ার হয়ে অনেকগুলো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করেছিলাম। সময়ের পরিক্রমায় এ ধরনের স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলো এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না।

1688404978035-01.jpeg

কিছুদিন আগে কুমিল্লার গোমতি নদীতে পরিবার নিয়ে কিছুটা সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পেরেছিলাম যে স্থানীয় একটা ক্লাবের উদ্যোগে নদীর পাশের মাঠে একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট এর আয়োজন করা হবে। শুনে আগ্রহ জন্মেছিল। পরবর্তীতে আয়োজন কমিটির সাথে কথা বলে জানলাম যে মোট ১৬ টা টিম অংশগ্রহন করবে। এধরনের একটা টুর্নামেন্টে এতগুলো টিম অংশগ্রহন করা আসলেও অনেক বড় একটা বিষয়।

আমি বর্তমানে যে কোম্পানিতে চাকরি করি, সেই কোম্পানি অনেক দিন ধরেই চাচ্ছিল কুমিল্লায় যে কোনো ধরনের একটা প্রোগ্রামে স্পন্সর করার জন্য। কিন্তু ব্যাটে বলে মিলছিল না বলে করা হচ্ছিল না। ব্যাক্তিগত ভাবে আমার কাছে এই ফুটবল টুর্নামেন্টটা অনেক আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। তাই টুর্নামেন্টের সমস্ত ইনফরমেশন আমাদের কোম্পানির এডমিনিস্ট্রেশনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।

1688404988890-01.jpeg

যদিও আমার মনে কিছুটা সংশয় ছিল এই ভেবে যে এধরনের লোকাল কোনো টুর্নামেন্টে তারা স্পনসর করতে আগ্রহী হবে কিনা। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তারা ঠিকই টুর্নামেন্টে স্পন্সর করার জন্য রাজী হয়ে গেল। শুনে আমিও খুশি হলাম। তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম তখন, যখন আমাকে গেস্ট হিসেবে টুর্নামেন্টের ওপেনিং প্রোগ্রামে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। ছোটবেলায় এসব টুর্নামেন্টে বহুবার খেলেছি, কিন্তু কখনো গেস্ট হিসেবে যাওয়া হয় নি। আমার জন্য একদম নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স ছিল এটা।

1688405015780-01.jpeg

যে মাঠে খেলা হচ্ছে, সেটা কুমিল্লা শহরের একদম শেষ প্রান্তে৷ গোমতী নদীর পাশেই বিশাল বড় এক মাঠ। যদিও এই মাঠে কোনো ফর্মাল গ্যালারি নেই, তবে টুর্নামেন্টের শুরুর দিন বেশ ভালই মানুষ হয়েছিল। অন্তত আমাদের এক্সপেক্টেশনের চেয়ে বেশিই। সবার সাথে কথাবার্তা বলে জানতে পারলাম এখানে নাকি প্রায়ই ছোট বড় নানা রকমের টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, তবে এই প্রথম কোনো কোম্পানি অফিশিয়ালি কোনো টুর্নামেন্টে স্পন্সর করেছে।

যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আগামীতে আমরা আরো টুর্নামেন্টে স্পন্সর করব। কারণ ব্যাক্তিগত ভাবে আমি নিজেই এসব খুব পছন্দ করি। আমি চাই আমাদের ছোটবেলার যেসব অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা বড় হয়েছি, সেসব যেন হারিয়ে না যায়। টেলিভিশন কিংবা মোবাইল ও ইন্টারনেটের জগতের পাশাপাশি যেন আমরা খেলাধূলার মাঝেও কিছুটা সময় থাকতে পারি, সেই সুযোগটা পর্যাপ্ত পরিমানে থাকা উচিত।

যায় হোক, এবার খেলার কথায় আসি। প্রথম দিনের খেলার ফলাফল ছিল ৪-২। প্রথম দিকে খেলাটা একদম একপেশে ছিল। বিজয়ী দল শুরুতেই টানা ৩ গোল করে ফেলে প্রথমার্ধে। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য বিপক্ষ দল কিছুটা কামব্যাক করার চেষ্টা করে। টানা দুই গোল দিয়ে সমতায় ফেরার তীব্র চেষ্টায় যখন লিপ্ত, ঠিক তখনই আরেক গোল খেয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে যায়।

খেলার ফলাফলে হয়তো একদল কষ্ট পেয়েছে, অন্য দল আনন্দে ভেসেছে। কিন্তু দিন শেষে আমরা যারা উপস্থিত ছিলাম, সবাই কিছুটা হলেও উপভোগ করতে পেরেছি। বহুদিন পর এরকম কোনো ম্যাচ চোখের সামনে দেখলাম।

1688405001354-01.jpeg

ছোটবেলার একটা ঘটনা হুট করে মনে পড়ে গেল। সেইটা লিখেই আজকের লেখা শেষ করে দিব। তখন সম্ভবত ক্লাস নাইনে পড়তাম। জুন মাস চলছিল। একদিন বিকালে খেলা ছিল অন্য পাড়ায়৷ সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতেই টিফিন টাইমে স্কুল পালিয়ে সাইকেল নিয়ে ভিজতে ভিজতে মাঠে চলে গিয়েছিলাম। সেই ম্যাচটা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক ছিল আমার জন্য। ম্যাচ তো হেরেছিলাম, পাশাপাশি বুকে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছিলাম। বুকে আঘাত পেয়ে কান্না করতে করতে মাঠের পাশে যখন বসে ছিলাম, তখন হঠাৎ খেয়াল করেছিলাম যে আমার পায়ে জোক একটা বসে আরামসে রক্ত চুষে যাচ্ছে। বুকের ব্যাথা ভুলে জোকের ভয়ে আত্মচিৎকার শুরু করে দিয়েছিলাম। সেই চিৎকারে সবাই খেলা বাদ দিয়ে আমার কাছে চলে এসে জোক নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু কোনো ভাবেই বের করতে পারছিল না। পরে একটা ছেলে কোত্থেকে যেন লবন ম্যানেজ করে নিয়ে এসে জোকের উপর ঢেলে দিয়েছিল। সেই লবনের স্পর্শে জোঁকটা যখন নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল, তখন আস্তে করে এটাকে বের করা সম্ভব হয়েছিল।

যায় হোক, সবকিছু শেষে যখন সন্ধ্যায় মন খারাপ নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম, তখন আরো একবার আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। আব্বু কোত্থেকে যেন খবর পেয়ে গিয়েছিল যে আমি টিফিন টাইমে স্কুল পালিয়েছিলাম। ব্যাস, আর যায় কই? বাসায় ফেরা মাত্রই উদুম বেদুম পিটানো শুরু...



0
0
0.000
0 comments